বিবাহ মানব জীবনের অন্যতম একটি অধ্যায়। বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী দেখার পর্ব জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মাঝে প্রচলিত বটে, কিন্তু মুসলমানদের জন্য তা গতানুগতিক বা নিছক প্রথাগত-ভাবে করার সুযোগ নেই। বরং পূর্ণ শরয়ী নীতিমালা অনুযায়ী তা করা বাঞ্ছনীয়। প্রথমে জানতে হবে, পাত্রী কখন দেখা যায়। দ্বিতীয়ত জানতে হবRead more
বিবাহ মানব জীবনের অন্যতম একটি অধ্যায়। বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী দেখার পর্ব জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মাঝে প্রচলিত বটে, কিন্তু মুসলমানদের জন্য তা গতানুগতিক বা নিছক প্রথাগত-ভাবে করার সুযোগ নেই।
বরং পূর্ণ শরয়ী নীতিমালা অনুযায়ী তা করা বাঞ্ছনীয়। প্রথমে জানতে হবে, পাত্রী কখন দেখা যায়। দ্বিতীয়ত জানতে হবে, কী উদ্দেশ্যে দেখা যায়।
মনে রাখতে হবে, পাত্রী কোন পণ্য নয় যে কেউ দেখতে থাকবে, অতঃপর যাকে পছন্দ হয় তাকে বিবাহ করবে।
অথচ কিছু লোক এরুপ অবাঞ্ছিত কাজ করে।
তারা একের পর এক পাত্রী দেখে আর ভাবে, এভাবে দেখে দেখে নির্ধারণ করবে যে, কাকে বিবাহ করবে।
এ কাজ ইসলাম সম্মত নয়।
শরীয়তের দৃষ্টিতে সার্বিক দিক পর্যালোচনার করে যার সংঙ্গে বিবাহের বিষয় চুড়ান্ত হয়ে যাবে, শুধু তাকে সর্বশেষ দিক হিসেবে দেখার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং কাকে বিবাহ করবে, এটা নির্ধারণ করতে হবে দেখাদেখির আগেই।
বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় বিষয় জানা এবং প্রয়োজনে মহিলাদের দ্বারা দেখা ইত্যাদির মাধ্যমে সব রকম খোঁজ-খবর নেয়ার পর বিবাহের বিষয় নিশ্চিত হয়ে গেলে তখন ছেলে মেয়েকে দেখতে পারে এবং মেয়েও ইচ্ছা করলে ছেলেকে দেখতে পারে।
সে সময় এ দেখা দেখির বিশেষ উদ্দেশ্য হল, বিবাহের ব্যাপারে পারস্পরিক আগ্রহ সৃষ্টি।
বিবাহের জন্য সবকিছু পছন্দ হওয়ার পর বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিলে, পরিশেষে পাত্রীকে কোন ভাবে দেখে নেয়া বিধেয়।
.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ যদি কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় এবং তার এমন কিছু দেখতে পারে-যা তাকে আগ্রহশীল করবে, তবে সে যেন তা করে নেয়।”
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, “আমি বনী সালামা গোত্রের এক মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেই এবং তাকে এক দৃষ্টি দেখার জন্য খেজুর গাছ তলায় লুকিয়ে থাকি। একদিন আমি তাকে দেখে ফেলি, যা আমাকে তার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলে। ফলে আমি তাকে বিবাহ করে নিই।”
{সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৩৪৮৭}
.
অন্য বর্ণনায় আছে, একদা মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যাও, তাকে দেখে এসো। কারণ, এ দেখা তোমাদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।”
মুগীরা (রাঃ) বলেন, একথা শুনে আমি পাত্রী দেখে আসি।
{সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৩৪৮৮}
.
সুতরাং বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখা বৈধ। বরং তা মুস্তাহাব।
বিবাহের জন্য পাত্রীকে দেখা বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির জন্য বৈধ।
ফিকহ ও হাদীসের ভাষ্য দ্ধারা এটা প্রমাণিত।
অবশ্য পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এ পাত্রী দেখার বিষয়টি আসবে চূড়ান্ত পর্যায়ে। অর্থাৎ অন্যান্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যাপার, খবরা-খবর নেয়ার পর সবকিছু ঠিকঠাক হলে এবং পাত্রীক মহিলাদের মাধ্যমে দেখানোর দ্ধারা পছন্দ করে বিবাহের ইচ্ছা দৃঢ় হলে, তখনই কেবল সর্বশেষে পাত্র পাত্রীকে দেখতে পারবে।
.
এ ব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দেই এবং বিষয়টা রাসূল (সাঃ) কে বলি।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছো?
আমি বললাম, না। তিঁনি বললেন, তুমি তাকে দেখে এসো।
কারণ-এ দেখাটা তোমাদের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী হবে।
ফলে আমি মেয়েটিকে দেখার জন্য যাই। তখন তার বাবা-মা সেখানে ছিল এবং মেয়েটি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল।
তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মেয়েটিকে দেখার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার এ-কথায় তার বাবা-মা নীরব রইলেন।
অন্য বর্ণনায় আছে, যেন তারা আমার এ কথাকে অপছন্দ করলেন। (তারা বিবাহের আগে পাত্রীকে দেখানোর পক্ষে ছিলেন না।)
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মেয়েটি বললো,
যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে আদেশ করে থাকেন, তাহলে আপনার দেখার সুবিধার্থে আমি আপনার সামনে আসছি।
আর যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে নির্দেশ না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আমার দিকে দৃষ্টি দিবেন না।
হযরত মুগীরা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি তাকে দেখি এবং তাকে বিবাহ করি।
{সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৮৬৬}
.
এ হাদীস দ্ধারা স্পষ্টভাবে বুঝা গেলো, নিয়ম তান্ত্রীকভাবে পাত্রী দেখা জায়িয আছে।
এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখার একটি উদ্দেশ্য উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে, এতে উভয়ের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টি হবে।
চুপিসারে দেখার দ্ধারা তা অর্জিত হবে কীভাবে?
উপরন্ত ফিকহের কিতাব সমূহে পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে নির্জনতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বরং এক্ষেত্রে মেয়ের কোন মাহরাম ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত থাকা আবশ্যক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখানে দেখানোর বিষয়টি জায়িয না হলে নির্জনতা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অর্থহীন হয়ে পড়ে।
কারণ, চুপিসারে দেখে নিলে সেখানে নির্জনে একত্রিত হওয়ার প্রশ্ন আসে না।
তাছাড়া ফিকহের কিতাব গুলোতে বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তি তার কাঙ্খিত পাত্রীর কতটুকু অংশ দেখতে পারবে, তার একটা সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।লুকিয়ে দেখার ক্ষেত্রে এ সীমারেখা নির্ধারণের আবেদনও নিঃশেষ হয়ে যায়। সুতরাং ফিকহের কিতাবসমূহের প্রাসঙ্গিক আলোচনা দ্বারা পাত্রী দেখানোর অবকাশ আছে বলে প্রমাণিত হয়।
তবে সেটা ঘটা করে বা জাঁকজমক পূর্ণভাবে না হওয়া চাই।
বরং অনানুষ্ঠানিক ও অনাড়ম্বর ভাবে হওয়া বাঞ্ছণীয়।
তেমনি ভাবে পাত্রীকে শুধু পাত্র দেখতে পারবে,পাত্র ছাড়া পাত্রের ভাই, পিতা, চাচা বা কোন মুরব্বী (পুরুষ) কিংবা অন্য কোন পুরুষ পাত্রীকে দেখতে পারবে না।
তা কিছুতেই জায়িয নয়।
{সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ,২য় খন্ড, ৭২৮ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৮৬৬/
মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১০৩৩৫}
. পাত্রীর কতটুকু অংশ দেখা যাবেঃ
পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে শুধু পাত্রীর চেহারা, হাতের পাঞ্জা ও পা দেখা যাবে।
এছাড়া অন্যকোন অঙ্গ দেখা যাবে না।
এমনকি মাথার চুলও দেখা যাবে না।
ইমাম বাইহাকী (রহঃ) তার সুনান গ্রন্থে বিবাহ অধ্যায়ে “প্রয়োজনের ক্ষেত্রে মহিলাদের শুধু চেহারা ও হাতের পাঞ্জা দেখা বৈধ” শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন এবং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ),আয়িশা (রাঃ) হতে হযরত আতা, সাঈদ বিন জুবাইর ও শাফী (রহঃ) সূত্রে পবিত্র কুরআনের আয়াত-ﺍﻻ ﻣﺎ ﻇﻬﺮ ﻣﻨﻬﺎ এর ব্যাখ্যায় চেহারা ও হাতের পাঞ্জাকে উল্লেখ করেছেন।
তেমনি ভাবে ইমাম মুসলিম (রহঃ) ও “বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির জন্য পাত্রীর চেহারা ও হাতের পাঞ্জা দেখা মুস্তাহাব” শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন।
বিবাহ মানব জীবনের অন্যতম একটি অধ্যায়। বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী দেখার পর্ব জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মাঝে প্রচলিত বটে, কিন্তু মুসলমানদের জন্য তা গতানুগতিক বা নিছক প্রথাগত-ভাবে করার সুযোগ নেই। বরং পূর্ণ শরয়ী নীতিমালা অনুযায়ী তা করা বাঞ্ছনীয়। প্রথমে জানতে হবে, পাত্রী কখন দেখা যায়। দ্বিতীয়ত জানতে হবRead more
বিবাহ মানব জীবনের অন্যতম একটি অধ্যায়। বিবাহের পূর্বে পাত্র-পাত্রী দেখার পর্ব জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মাঝে প্রচলিত বটে, কিন্তু মুসলমানদের জন্য তা গতানুগতিক বা নিছক প্রথাগত-ভাবে করার সুযোগ নেই।
বরং পূর্ণ শরয়ী নীতিমালা অনুযায়ী তা করা বাঞ্ছনীয়।
প্রথমে জানতে হবে, পাত্রী কখন দেখা যায়।
দ্বিতীয়ত জানতে হবে, কী উদ্দেশ্যে দেখা যায়।
মনে রাখতে হবে, পাত্রী কোন পণ্য নয় যে কেউ দেখতে থাকবে, অতঃপর যাকে পছন্দ হয় তাকে বিবাহ করবে।
অথচ কিছু লোক এরুপ অবাঞ্ছিত কাজ করে।
তারা একের পর এক পাত্রী দেখে আর ভাবে, এভাবে দেখে দেখে নির্ধারণ করবে যে, কাকে বিবাহ করবে।
এ কাজ ইসলাম সম্মত নয়।
শরীয়তের দৃষ্টিতে সার্বিক দিক পর্যালোচনার করে যার সংঙ্গে বিবাহের বিষয় চুড়ান্ত হয়ে যাবে, শুধু তাকে সর্বশেষ দিক হিসেবে দেখার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং কাকে বিবাহ করবে, এটা নির্ধারণ করতে হবে দেখাদেখির আগেই।
বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় বিষয় জানা এবং প্রয়োজনে মহিলাদের দ্বারা দেখা ইত্যাদির মাধ্যমে সব রকম খোঁজ-খবর নেয়ার পর বিবাহের বিষয় নিশ্চিত হয়ে গেলে তখন ছেলে মেয়েকে দেখতে পারে এবং মেয়েও ইচ্ছা করলে ছেলেকে দেখতে পারে।
সে সময় এ দেখা দেখির বিশেষ উদ্দেশ্য হল, বিবাহের ব্যাপারে পারস্পরিক আগ্রহ সৃষ্টি।
বিবাহের জন্য সবকিছু পছন্দ হওয়ার পর বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিলে, পরিশেষে পাত্রীকে কোন ভাবে দেখে নেয়া বিধেয়।
.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ যদি কোন মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় এবং তার এমন কিছু দেখতে পারে-যা তাকে আগ্রহশীল করবে, তবে সে যেন তা করে নেয়।”
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, “আমি বনী সালামা গোত্রের এক মেয়েকে বিবাহের প্রস্তাব দেই এবং তাকে এক দৃষ্টি দেখার জন্য খেজুর গাছ তলায় লুকিয়ে থাকি। একদিন আমি তাকে দেখে ফেলি, যা আমাকে তার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলে। ফলে আমি তাকে বিবাহ করে নিই।”
{সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৩৪৮৭}
.
অন্য বর্ণনায় আছে, একদা মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যাও, তাকে দেখে এসো। কারণ, এ দেখা তোমাদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।”
মুগীরা (রাঃ) বলেন, একথা শুনে আমি পাত্রী দেখে আসি।
{সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৩৪৮৮}
.
সুতরাং বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখা বৈধ। বরং তা মুস্তাহাব।
বিবাহের জন্য পাত্রীকে দেখা বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির জন্য বৈধ।
ফিকহ ও হাদীসের ভাষ্য দ্ধারা এটা প্রমাণিত।
অবশ্য পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এ পাত্রী দেখার বিষয়টি আসবে চূড়ান্ত পর্যায়ে। অর্থাৎ অন্যান্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যাপার, খবরা-খবর নেয়ার পর সবকিছু ঠিকঠাক হলে এবং পাত্রীক মহিলাদের মাধ্যমে দেখানোর দ্ধারা পছন্দ করে বিবাহের ইচ্ছা দৃঢ় হলে, তখনই কেবল সর্বশেষে পাত্র পাত্রীকে দেখতে পারবে।
.
এ ব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দেই এবং বিষয়টা রাসূল (সাঃ) কে বলি।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছো?
আমি বললাম, না। তিঁনি বললেন, তুমি তাকে দেখে এসো।
কারণ-এ দেখাটা তোমাদের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী হবে।
ফলে আমি মেয়েটিকে দেখার জন্য যাই। তখন তার বাবা-মা সেখানে ছিল এবং মেয়েটি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল।
তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মেয়েটিকে দেখার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমার এ-কথায় তার বাবা-মা নীরব রইলেন।
অন্য বর্ণনায় আছে, যেন তারা আমার এ কথাকে অপছন্দ করলেন। (তারা বিবাহের আগে পাত্রীকে দেখানোর পক্ষে ছিলেন না।)
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মেয়েটি বললো,
যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে আদেশ করে থাকেন, তাহলে আপনার দেখার সুবিধার্থে আমি আপনার সামনে আসছি।
আর যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে নির্দেশ না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আমার দিকে দৃষ্টি দিবেন না।
হযরত মুগীরা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি তাকে দেখি এবং তাকে বিবাহ করি।
{সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৮৬৬}
.
এ হাদীস দ্ধারা স্পষ্টভাবে বুঝা গেলো, নিয়ম তান্ত্রীকভাবে পাত্রী দেখা জায়িয আছে।
এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখার একটি উদ্দেশ্য উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে যে, এতে উভয়ের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টি হবে।
চুপিসারে দেখার দ্ধারা তা অর্জিত হবে কীভাবে?
উপরন্ত ফিকহের কিতাব সমূহে পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে নির্জনতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বরং এক্ষেত্রে মেয়ের কোন মাহরাম ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত থাকা আবশ্যক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখানে দেখানোর বিষয়টি জায়িয না হলে নির্জনতা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অর্থহীন হয়ে পড়ে।
কারণ, চুপিসারে দেখে নিলে সেখানে নির্জনে একত্রিত হওয়ার প্রশ্ন আসে না।
তাছাড়া ফিকহের কিতাব গুলোতে বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তি তার কাঙ্খিত পাত্রীর কতটুকু অংশ দেখতে পারবে, তার একটা সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।লুকিয়ে দেখার ক্ষেত্রে এ সীমারেখা নির্ধারণের আবেদনও নিঃশেষ হয়ে যায়। সুতরাং ফিকহের কিতাবসমূহের প্রাসঙ্গিক আলোচনা দ্বারা পাত্রী দেখানোর অবকাশ আছে বলে প্রমাণিত হয়।
তবে সেটা ঘটা করে বা জাঁকজমক পূর্ণভাবে না হওয়া চাই।
বরং অনানুষ্ঠানিক ও অনাড়ম্বর ভাবে হওয়া বাঞ্ছণীয়।
তেমনি ভাবে পাত্রীকে শুধু পাত্র দেখতে পারবে,পাত্র ছাড়া পাত্রের ভাই, পিতা, চাচা বা কোন মুরব্বী (পুরুষ) কিংবা অন্য কোন পুরুষ পাত্রীকে দেখতে পারবে না।
তা কিছুতেই জায়িয নয়।
{সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ,২য় খন্ড, ৭২৮ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৮৬৬/
মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৬৩ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১০৩৩৫}
.
পাত্রীর কতটুকু অংশ দেখা যাবেঃ
পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে শুধু পাত্রীর চেহারা, হাতের পাঞ্জা ও পা দেখা যাবে।
এছাড়া অন্যকোন অঙ্গ দেখা যাবে না।
এমনকি মাথার চুলও দেখা যাবে না।
ইমাম বাইহাকী (রহঃ) তার সুনান গ্রন্থে বিবাহ অধ্যায়ে “প্রয়োজনের ক্ষেত্রে মহিলাদের শুধু চেহারা ও হাতের পাঞ্জা দেখা বৈধ” শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন এবং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ),আয়িশা (রাঃ) হতে হযরত আতা, সাঈদ বিন জুবাইর ও শাফী (রহঃ) সূত্রে পবিত্র কুরআনের আয়াত-ﺍﻻ ﻣﺎ ﻇﻬﺮ ﻣﻨﻬﺎ এর ব্যাখ্যায় চেহারা ও হাতের পাঞ্জাকে উল্লেখ করেছেন।
তেমনি ভাবে ইমাম মুসলিম (রহঃ) ও “বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির জন্য পাত্রীর চেহারা ও হাতের পাঞ্জা দেখা মুস্তাহাব” শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন।
{সূত্রঃ সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৩৪৯৬/বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ৩য় খন্ড, ৩১ পৃষ্ঠা/ফাতাওয়া শামী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা}